রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়ত থেকে আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে মাছ নিয়ে কাজলা যাচ্ছিলেন ভ্যানচালক আবদুর রহিম। তিনি যখন যাত্রাবাড়ীর ফলের আড়তের সামনে আসেন, তখন তাঁর ভ্যানগাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। আবার তাঁর সামনে থাকা রিকশা, অটোরিকশা কোমরপানিতে আটকে আছে। আধা ঘণ্টা পানির মধ্যে আটকে থাকায় একপর্যায়ে কাঁদতে থাকেন রহিম। তিনি বলছিলেন, ‘মাল নিয়ে এত পানির মধ্যে চলা কত যে কষ্টের, তা কাউকে বোঝানো যাবে না। কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন এমন কষ্ট করছি। বৃষ্টি হওয়ায় পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। আর কত দিন আমাদের কষ্ট করতে হবে?’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কাজলা মোড় পর্যন্ত সড়কের বাঁ পাশের রাস্তা বন্ধ করে সংস্কারকাজ চালানো হচ্ছে। ডান পাশের রাস্তা যান চলাচল করছে। রাস্তা সংস্কারের কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী ফারাজী শাহবুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কের এক কিলোমিটারে সংস্কারকাজ চলছে। সংস্কারকাজের জন্যই এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে অপর পাশ দিয়ে দুই পাশের গাড়ি চলছে। বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’ তিনি জানান, এই রাস্তায় পানিনিষ্কাশনের অবস্থা খুব খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। যে কারণে কাজের অগ্রগতি কম।
আজ সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেল, যাত্রাবাড়ীর ফলের আড়তের সামনের অংশে কোমরপানি জমে ছিল। বাঁ পাশের রাস্তা বন্ধ থাকায় যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরাগামী সব গাড়ি ডান পাশের রাস্তা দিয়ে ঢোকে। আবার ডেমরা থেকে যাত্রাবাড়ীমুখী গাড়িও একই রোডে আসে। এমন পানির মধ্যে যানজটে গাড়ি আটকে থাকে। সিলেট থেকে ঢাকাগামী দিগন্ত পরিবহন জ্যামের মধ্যে আটকে থাকে প্রায় আধা ঘণ্টা। যাত্রী আবদুল্লাহ আল গালিব বলছিলেন, এ মহাসড়ক দিয়ে তাঁদের চলতে হয়। এখানকার এক পাশের রাস্তা বন্ধ। অপর পাশের রাস্তার যে অবস্থা, তাতে ঈদের সময় মহাদুর্ভোগে পড়বে যাত্রীরা।
ষাটোর্ধ্ব আফসান আহমেদ থাকেন মৃধাবাড়ীতে। সকালে তিনি রিকশায় চড়ে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন। যখন তিনি ফলের আড়তের সামনে আসেন, তখন রিকশা পানির মধ্যে ১০ মিনিট আটকে থাকে। রিকশার ওপরে বসে আফসান বলছিলেন, কয়েক বছর ধরে মহাসড়কের এমন দুরবস্থা। কয়েক মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। অথচ কাজ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
কত মাস যে লাগবে, তা কেউ বলতে পারে না। তাঁর অভিযোগ, প্রতিদিন যাত্রাবাড়ী-ডেমরার লাখ লাখ মানুষকে রাস্তার কারণে এমন অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পানিতে আটকে থাকা পিকআপ চালক ইয়াকুব আলী বললেন, ‘রাস্তা খারাপের কারণে প্রায় প্রতিদিন এখানে গাড়ি উল্টে যায়। এতে গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।’ গতকাল ভোরবেলা সেখানে একটি ট্রাক উল্টে পড়ে যায়। পানির মধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে সিএনজি, পিকআপ ও লেগুনা আটকে যায়।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, যাত্রাবাড়ীর এ রাস্তা খারাপের কারণে জনগণের চেয়ে পুলিশ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ফারাজী শাহবুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা হবে।’
Source:Prothom Alo
0 comments:
Post a Comment