Daily bangla news by JasHim News 24 all bd news live 24 hours in this field thanks for watching.

Thursday, June 15, 2017

পুরান ঢাকায় জমজমাট সাহরি পার্টি by Jashim News 24

তখন রাত দেড়টা। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। রাস্তায় খুব বেশি মানুষ নেই। ট্রাক থেকে মালামাল নামানোর জন্য কিছু লোকের আনাগোনা ছাড়া চারপাশ সুনসান। খাবারের হোটেলগুলোর সামনে রংবেরংয়ে আলো জ্বলছে। একের পর এক গাড়ি এসে থামছে খাবার হোটেলগুলোর সামনে। দেখে মনে হতে পারে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে দিতে সবাই গাড়ি থামিয়ে যাত্রাবিরতি করছে। আসলে তা নয়, সবাই এসেছে সাহরি পার্টি করতে, সাহরি খেতে।

পুরান ঢাকার বংশাল, জনসন রোড, নাজিরা বাজার ও চানখাঁরপুল এলাকার হোটেলগুলোর সামনে এমন চিত্র এখন প্রতি রাতের। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আসছেন সাহরি পার্টিতে। হোটেলগুলো সাহরি পার্টি উপলক্ষে খোলা থাকছে সাহরির শেষ সময় পর্যন্ত।

পুরান ঢাকার স্টার কাবাবে কলতাবাজার থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাহরি পার্টিতে এসেছেন মো. মামুন। তিনি ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেখেছেন। দু-একজনের মুখেও জানতে পেরেছেন বিষয়টি নিয়ে। তাই অভিজ্ঞতা নিতে মা, বোন আর ভাইসহ চলে এসেছেন সাহরি পার্টিতে। সাহরি খেতে খেতে মামুন বলছিলেন, অনেক দিন পর বোন বাড়ি এসেছে। সে জন্য আর সাহরি পার্টির অভিজ্ঞতা নিতে এসেছেন তাঁরা। এ সময় তাঁর মা জানালেন, সাহরি পার্টি তিনিও উপভোগ করেছেন।

মামুনের বোন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মাহমুদা মুনমুন বলেন, ‘প্রথমবার পরিবার নিয়ে সাহরি খেতে এসেছি। ভালো লাগছে। সুযোগ পেলে সামনে আবারও আসব।’

গত সোমবার রাতে বৃষ্টির মধ্যেও বন্ধুদের সঙ্গে কেরানীগঞ্জ থেকে সাহরি পার্টি করতে হোটেল আল রাজ্জাকে এসেছেন তিন বন্ধু। তাঁরা তিনজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বন্ধুদের সঙ্গে সাহরি খেতে এসেছিলেন নয়ন কুন্ডু। নয়ন জানালেন, এবারসহ তিন বছর হলো তিনি সাহরি পার্টিতে আসছেন। বন্ধুদের সঙ্গে খেতে খেতে আড্ডা দিতে ভালো লাগে, এ জন্য তিনি আসেন।

নয়নের বন্ধু মাজহারুল ইসলাম বন্ধুদের কাছে সাহরি পার্টির বিষয়ে জানতে পেরে প্রথমবার এসেছেন সাহরি খেতে। ফেসবুকে জানতে পেরে বন্ধুদের সঙ্গে চলে এসেছেন বলে জানালেন মাজহারুল। এ ছাড়া সাহরি খাওয়া, গল্প করা আর আড্ডা দেওয়ার সুযোগও হয়, তা তিনি হাতছাড়া করতে চাননি।

এ ছাড়া বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে, চার-পাঁচজনের ছোট ছোট একটি করে দল। এমন ছোট ছোট ১০ থেকে ১২টি দল রেস্টুরেন্টে গল্প আর আড্ডা দিতে দিতে সাহরি সেরে নিচ্ছিল। আর রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে দুই-একটিতে ভিড় একটু বেশি দেখা গেছে। বাকিগুলোতে মোটামুটি ভিড় ছিল। দু-একটি হোটেলে পরিবার নিয়ে খাওয়ার জন্য আছে আলাদা ছোট ছোট কামরা। আর এসব কামরার আড্ডা ছিল চোখে পড়ার মতো।

এত রাতে হোটেল খোলা থাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সবার চিন্তা হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের মানুষ যেহেতু সাহরি খেতে আসেন, তাই নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে আসে। এ বিষয়ে হোটেল আল রাজ্জাকের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, ‘পুলিশ আমাদের এখানে একটু পরপর এসে খবর নিয়ে যায়। আর এখান থেকে ৩০০ গজ দূরে পুলিশের একটা টহল দল সব সময় থাকে। তাই কোনো সমস্যা হয় না।’

আর গ্রাহকের উপস্থিতি বিষয়ে হোটেল আল রাজ্জাকের ব্যবস্থাপক মো. রানা হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গ্রাহকদের জন্য জায়গার সংকুলান করা যায় না। অনেক বেশি ভিড় হয়। তবে বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কম গ্রাহক আসছেন।

জনসন রোডের স্টার হোটেল ও কড়াই গোশতেও মোটামুটি লোক সমাগম দেখা গেল। স্টার হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে তাঁদের শাখা খোলার এক বছর হলো। তারপরও সাহরি পার্টিতে ভালোই লোকজন আসছেন। তাঁদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই এখানে।

২০১০ সালের আগেও সাহরি পার্টি ধারণাটি ছিল পুরোপুরি অপরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালের কল্যাণে জনপ্রিয় হচ্ছে সাহরি পার্টি। ১২ বছর ধরে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানালেন, গত তিন থেকে চার বছর ধরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সাহরি পার্টি।

পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, কড়াই গোশত, বিসমিল্লাহ কাবাব, আলিফ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ছোট-বড় খাবারের দোকান এখন সাহরিতে খোলা থাকে। এসব রেস্টুরেন্টের বেশির ভাগই ইফতার ও সাহরিকে কেন্দ্র করে খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় এসব জায়গায় ভিড় থাকে অনেক বেশি।

মোরগ পোলাও, নান রুটি, সাদা ভাত, তেহারি, ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি, মাটন লেগ রোস্ট, মাটন গ্লাসি, মুরগির ফুল রোস্ট, মুরগির চাটনি, মুরগির মোসল্লাম, রুপচাঁদা মাছ, চিংড়ি মাছ এবং রুই মাছ পাওয়া যায় সাহরির সময়। এসব খাবারের মধ্যে একজন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা খরচ করে খেতে পারবেন মুখরোচক খাবার। এ ছাড়া বেশির ভাগ খাবারেরই মূল্য তুলনামূলক অনেক কম।
Source: Prothomalo
Share:

0 comments:

Post a Comment

Facebook

Search This Blog

News Archive

Blog Archive