দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় এই দুর্যোগে এ পর্যন্ত ১৫৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ১১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
গত সোমবার রাত থেকে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান শুক্রবার বিকাল পৌনে ৬টায় এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
ঢাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থানা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ১১০ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, বান্দরবানে ৬ জন, কক্সবাজারের ২ জন ও খাগড়াছড়িতে ১ জনের প্রাণহানির তথ্য তাদের হাতে পৌঁছেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ঢলে ভেসে গিয়ে, গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৪ জনের।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মানজারুল মান্নান বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক। ভূমি ধসের বিষয়টি প্রাকৃতিক। বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ভারি বর্ষণে এ ঘটনা ঘটেছে। এবারের ভারি বর্ষণে রাঙামাটির সব পাহাড়ের চূড়া ভেঙে গেছে। এটা ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা। আমরা সচেতন থাকব।”
উদ্ধার কাজে জেলা প্রশাসনসহ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় তরুণ-যুবা ও বিভিন্ন সংগঠন সহায়তা করেছে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজও উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে।
জেলা প্রশাসক বলেন, “এ পর্যন্ত রাঙামাটিতে ১১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুয়েক জায়গায় কয়েকজন নিখোঁজ থাকতে পারে। সব মিলিয়ে নিখোঁজদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য না থাকায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করছি।
“যদি কোথাও কোনো নিখোঁজের সংবাদ থাকে, তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার অভিযান শুরু করব।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাঙামাটির ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গতদের খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও চাল দেওয়া হচ্ছে। আহত প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা ও চাল।
নতুন করে ভারি বর্ষণে ভূমি ধসের আশঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে এবং প্রশাসন সার্বিক বিষয়ে ‘সতর্ক রয়েছে’ বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা নির্বাহী হাকিম খন্দকার মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত জানান, রাঙামাটিতে যে ১১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪২ জন পুরুষ, ৩৩ জন নারী এবং ৩৫টি শিশু।
সদর উপজেলার ৬৫ জন, কাউখালিতে ২১ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন, বিলাইছড়িতে দুইজন এবং জুড়াছড়িতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে ভূমি ধসে।
জেলা প্রশাসনের সংবাদ সম্মেলনের আগে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক, সেনা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে উদ্ধার অভিযান ও পরবর্তী করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
Source: BDNEWS24
0 comments:
Post a Comment