‘অ ভাই, কিল্লে দৌড় দিই বাইর নঅইলি। আঁই এহন হারে লই থাইক্কুম? আঁর বাবা-মারে হনে চাইব?’ (ভাই, কেন দৌড় দিয়ে বের হলি না। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব। বাবা-মাকে কে দেখবে?) শিলা দত্তের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত।
ধ্বংসস্তূপ থেকে শিলার ছোট ভাই রূপন দত্তের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে ভাইয়ের হাত দেখা যাওয়ার পর থেকেই বিলাপ করছিলেন বড় বোন শিলা দত্ত। গত মঙ্গলবারের পাহাড়ধসে চাপা পড়েন রূপন (২২)। সঙ্গে মা-বাবা ও বড় ভাই সুমন দত্ত (২৮)। সুমনের মরদেহ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে দাহ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধার করা হয় রূপনের মরদেহ।
রূপনদের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িটির চিহ্নমাত্র দেখা গেল না ভেদভেদী পোস্ট অফিস কলোনিতে। কেবল ধ্বংসস্তূপ। ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে আজ সকাল ১০টায় বের করে আনা হলো রূপনের প্রাণহীন দেহ।
ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া রূপনের বাবা-মা তখনো রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে। বাবা বাদল দত্তকে জানানো হলেও মা বুলু দত্ত তখনো জানেন না তাঁর দুই ছেলে এখন না-ফেরার দেশে।
উদ্ধার করে নেওয়া হচ্ছে রূপনের মরদেহ। ছবি: প্রণব বল
দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় শিলা দত্ত। বিয়ে হয়েছে রাঙামাটিতেই। অপর বোন শিপ্রা দত্তের বাড়িও রাঙামাটিতে। বাপের বাড়ি ধসে যাওয়ার খবর শুনে মঙ্গলবারই ছুটে আসেন শিলা। আজ রূপনের মরদেহ উদ্ধারের পর বিলাপ করছিলেন শিলা, ‘আমরা কেন বেঁচে থাকলাম। আমার দুই ভাইয়ের বদলে আমাকে নিয়ে যেত। আমাদের যে আর কিছু রইল না।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রূপনের মা বুলু দত্তকে ছেলেরা আহত বলে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বারবার বলে যাচ্ছেন, ‘আমার ছেলে দুটোকে আমার পাশে এনে দাও। তারাও আমার পাশে চিকিৎসা নিক।’
কোথা থেকে এনে দেবে? দুই সহদোর যে এখন না-ফেরার দেশে। শিলার বড় ভাই সুমন বাবা বাদল দত্তের সঙ্গে চায়ের দোকান চালাতেন। আর রূপন ভাড়ায় গাড়ি চালাতেন।
রূপনের মামাতো ভাই বিধার বিশ্বাস বলেন, ‘আমার পিসি (বুলু দত্ত) বারবার দুই ছেলেকে খুঁজছেন। উনি বলছেন ছেলেদের ওনার পাশে এনে দিতে। কীভাবে উনাকে শান্ত করব বুঝতে পারছি না।’
রূপনসহ আজ সকালে রাঙামাটিতে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন সেনাসদস্যও রয়েছেন। এ নিয়ে রাঙামাটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৮-এ।
Source:Prothom Alo
0 comments:
Post a Comment