Apon jewelers |
আপন জুয়েলার্সের একটি শোরুম থেকে গতকাল রবিবার আরো ২২ কেজি সোনা জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর আগে জব্দ করা সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরার সঙ্গে এই ২২ কেজি সোনাও গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তিনটি দল পর্যায়ক্রমে জব্দ করা সোনা ও হীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেয়। ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের কারেন্সি অফিসার মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব এই সোনা ও হীরা গ্রহণ করেন। পরে সেগুলো ভল্টে রাখা হয়।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাড়ে ১৩ মণ সোনা, ৪২৭ গ্রাম হীরা জমা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে সংবাদ আসে শুল্ক গোয়েন্দার একটি দল আপন জুয়েলার্সের একটি শোরুমে ভল্টের মধ্যে আরো একটি গোপন ভল্টের সন্ধান পেয়েছে। তাতে আরো ২২ কেজি সোনা পাওয়া গেছে। বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় সবই বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। ’
মহাপরিচালক জানান, শুল্ক গোয়েন্দা, শুল্ক কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে এসব সোনা ও হীরা পরিমাপ করে জমা দেওয়া হয়েছে। জব্দ সোনা প্রকৃত কিনা বা খাঁদের পরিমাণ কেমন তাও যাচাই করা হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারলে নির্দিষ্ট মেয়াদে এসব সোনা প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া হবে। আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ কয়েকজনকে এসব সোনা সরবরাহকারী হিসেবে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। খতিয়ে দেখে জানা গেছে, এরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আপন জুয়েলার্সে সোনা কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, আইনি ভিত্তি কী, তা জানতে শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের তলব করে জানতে চাওয়া হয়। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পরও এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো জবাব দিতে পারেনি তারা। এ পরিস্থিতিতে জব্দ করা সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১৪ ও ১৫ মে রাজধানীর শুলশানের ডিসিসি মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, গুলশান এভিনিউ, উত্তরা ও সীমান্ত স্কয়ারে আপন জুয়েলার্সের শোরুমগুলো থেকে এসব সোনা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা। এরপর ১৭ মে ও ৩০ মে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই গোলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জব্দ করা সোনার অনুকূলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিলাদি দেখাতে তাঁরা সময় চান। তিনবার শুনানির সুযোগ দিলেও তাঁরা কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় শুল্ক গোয়েন্দা আনুষ্ঠানিকভাবে সোনা জব্দ দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিল।
তবে মালিকপক্ষের দেওয়া ১৮২ জনের তালিকার মধ্যে ৮৫ জন প্রকৃত গ্রাহককে মেরামতের জন্য জমা রাখা তাদের প্রায় ২ দশমিক ৩ কেজি সোনা অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়া হয়।
রাজধানীর বনানীতে হোটেলে আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত ৬ মে মামলা হয়। এরপর আপন জুয়েলার্সের ব্যবসায় স্বচ্ছতার অভাব থাকার অভিযোগে অভিযানে নামে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
শুল্ক গোয়েন্দাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
শুল্ক গোয়েন্দার পাঁচটি দল গত ১৪ ও ১৫ মে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুমে অভিযান চালিয়ে ৪৯৭ কেজি (১৩ দশমিক ৫ মণ) স্বর্ণালংকার ও ৪২৯ গ্রাম হীরা সাময়িকভাবে আটক করে। পরে সেসব শোরুমগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধির জিম্মায় দেওয়া হয়।
এসব মূল্যবান সামগ্রী সরবরাহের বিষয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে বৈধ নথিপত্র আপন জুয়েলার্স দেখাতে না পারায় এবং আমদানি ও ক্রয়ের উৎস তদন্তদলের কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সাময়িকভাবে আটক করা হয়। গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এসব স্বর্ণ ও হীরার অলংকার মজুদের বিষয়ে মালিকপক্ষ যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারায় এগুলো ‘চোরাচালান’ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর বিধান অনুসারে ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল এগুলো জমা দেওয়া হয়েছে। গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে আপন জুয়েলার্সের শোরুমে তল্লাশিকালে অতিরিক্ত ২১ দশমিক ৮৮৩ কেজি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়। তদন্ত টিম লকারের ভেতরে আরেকটি লকারের সন্ধান পায়। সেখানে পাওয়া এসব স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়।
Source: kaler kantho
0 comments:
Post a Comment