বাংলাদেশের জন্য ১৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে ‘জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা’ (জাইকা)। সংস্থাটি ৩৮তম ‘অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স’ (ওডিএ) প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশের জন্য এ ঋণ অনুমোদন করেছে। সম্প্রতি জাইকা প্রেসিডেন্ট ড. শিনিচি কিতাওকা বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ কথা অবহিত করেছেন। হলি আর্টিজানে জাপানি নাগরিক খুন হওয়ায় জাইকার আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল এর মাধ্যমে তা কেটে গেছে। ঢাকা ও টোকিও থেকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
জাইকা প্রেসিডেন্ট ২৪-২৬ মে বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। নতুন প্যাকেজে ঋণের পরিমাণ বিগত ৩৭তম ওডিএ প্যাকেজের চেয়ে বেশি। বিগত ওডিএ প্যাকেজে বাংলাদেশকে ১৫০ কোটি ডলার ঋণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, এবারের সফরে জাইকা প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠককালে বাংলাদেশে জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানি নাগরিকরা নিহত হওয়ার পর এ বিষয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া আলাদা ঘটনায় জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়েও তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। পাশাপাশি, নতুন ওডিএ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ আলোচনা হয়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০১৪ সালে ঢাকা সফরকালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, জাপান বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুত ওই ঋণ পর্যায়ক্রমে দেয়া হয়ে থাকে। জাইকা এবার যে ৩৮তম ওডিএ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে; এটা হল জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ডলার ঋণের অংশ।
জানতে চাইলে জাপানে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আশরাফ-উদ দৌলা শনিবার যুগান্তরকে বলেছেন, ‘জাপান বাংলাদেশের এক নম্বর একক উন্নয়ন অংশীদার দেশ। জাপানি সহায়তার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে। জাপানি সহায়তার পুরোটাই ঋণ নয়। কিছু কিছু অনুদান। অতীতে জাপান আমাদের অনেক ঋণ মওকুফও করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাপানি সহায়তার গতি কিছুটা কমে। নিরাপত্তা নিয়ে জাপানিদের উদ্বেগ এখনও দূর হয়নি। সেই ভয়টা তারা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জাপানিরা এখনও চিন্তা করছেন, ওই হামলা বাংলাদেশ-জাপানের স্বার্থের ওপর টার্গেট করে করা হয়েছে নাকি উগ্র ইসলামী জঙ্গিদের এটি নির্বিচার হামলা।
এ নিয়ে অনেক জায়গায় আলোচনা হয়েছে।’
সাবেক এ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘জাইকা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনি বাংলাদেশে জাপানি সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে জাপানের সহায়তার গতি অবশ্যই কিছুটা ধীর হবে।’ ঢাকায় জাপানি এক কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেছেন, ‘মেট্রোরেলসহ জাপানি সাহায্যপুষ্ট অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
ঢাকায় সংশ্লিষ্ট এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘জাইকা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকে একটা বার্তাই দিয়েছেন যে, জাইকা বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়া কখনোই বন্ধ করবে না। বাংলাদেশ সরকার জাপানের নাগরিকদের জন্য যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে তাতে জাপান সন্তুষ্ট।’ এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। প্রসঙ্গত গত বছরের পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে জাপানের সাতজন নাগরিক রয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্যাকেজে জাপানের ঋণের অর্থ জাপানি সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। বিশেষ করে বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেগুলো পূর্ববর্তী ঋণের প্যাকেজে শুরু হয়েছিল; সেগুলোর নতুন পর্যায়ের কাজে ৩৮তম ওডিএ প্যাকেজে ব্যয় হবে। নতুন প্যাকেজের অর্থ দিয়ে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া মাতারবাড়ীতে ১৩৬০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং সে লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রে জেটি নির্মাণের জন্যও ঋণের অর্থ ব্যয় হবে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল ও গণ-ট্রানজিট প্রকল্পেও ঋণের অর্থ ব্যয় হবে।
বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘জাইকা ঋণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় আমরা খুবই খুশি। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল পাওনা। কারণ, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর জাইকার সহায়তা নিয়ে ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাপান সরকারের ওপর দেশটির কোনো কোনো পর্যায় থেকে চাপ ছিল। কিন্তু দেখা গেল, সেই সহায়তা কমেনি বরং বেড়েছে। এটা বাংলাদেশের প্রতি জাপানের গভীর অঙ্গীকারের প্রতিফলন।’
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশকে অন্য যে কোনো দেশের কিংবা বহুজাতিক দাতা সংস্থার তুলনায় জাপান সহজ শর্তে ঋণ দেয়। এসব ঋণে সুদের হার কম, গ্রেস পিরিয়ড থাকে এবং দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে তা পরিশোধের সুযোগ থাকে। তাছাড়া জাপানিরা ঋণ দিয়ে বাংলাদেশের ওপর খবরদারি করে না। অন্যরা ঋণ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রকমের খবরদারি করে থাকে। জাপানি ঋণের ক্ষেত্রে এ সুবিধা রয়েছে।
Source:Jugantor
Source:Jugantor
0 comments:
Post a Comment