বারুদের গন্ধে ঘুম ভাঙে। রক্তের দাগ মুছে দিন শুরু হয় আহরার জিবরিনের। ফিলিস্তিনের নারী সাংবাদিক আহরারের কাছে প্রতিদিন বেঁচে থাকাই যেন বড় রকমের যুদ্ধ! তুর্কমিনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে ৮-১১ জুন হয়ে গেল ক্রীড়া সাংবাদিকদের মিলনমেলা। এতে অংশ নিতে বিশ্বের নানা প্রান্তের সাংবাদিকদের সঙ্গে এসেছিলেন আহরার। যুদ্ধের ময়দানের মতো খেলার মাঠেও যেন সমানে লড়ে চলেছেন ফিলিস্তিনের এই সাংবাদিক।
আগামী ১৭ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর আশখাবাদে বসবে পঞ্চম এশিয়ান ইনডোর গেমস। এই আসর সামনে রেখে ১০০ দিন আগে গণনা শুরু হয়েছে আশখাবাদে। গণনা আর গেমস ভেন্যু কেমন প্রস্তুত, তা জানাতেই তুর্কমিনিস্তান সরকার আমন্ত্রণ জানায় বিশ্বের নানা দেশের ক্রীড়া সাংবাদিক ও খেলা সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। এই মিলনমেলায় এসে অন্যদের সঙ্গে সমানে তাল মিলিয়ে কাজ করেছেন আহরার। প্রতিনিয়তই যেমনটা করতে হয় নিজের শহর রামালাতে।
আহরার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করছেন ফিলিস্তিনের আল কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাত বছর রয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকতা পেশায়। খেলার প্রতিবেদন লেখার পাশাপাশি ছবিও তুলতে হয় তাঁকে। সাংবাদিকতা কতটা চ্যালেঞ্জের? প্রশ্নটা করতেই আহরারের মুখে যুদ্ধজয়ের হাসি, ‘প্রথম যেদিন মাঠে গেলাম, সব ফুটবলার আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। স্টেডিয়ামে সবাই পুরুষ, কিন্তু আমি একাই ছিলাম নারী, এ জন্যই ওরা একটু বেশি অবাক হয়েছিল। কিন্তু এখন বিষয়টাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন খেলোয়াড়েরা।’
আহরারের বাবা জেরিকো শহরের একটি সুপার মার্কেটের দোকানি। মা গৃহিণী। পরিবার থেকে পুরো সমর্থন পেয়ে থাকেন আহরার, ‘মা সব সময় বলেন, তুমি ভয় পেয়ো না। কাজে যাও। তুমি খুব সাহসী মেয়ে।’ কিন্তু সত্যি একদিন ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন আহরার। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যেতেই শুরু হয় গোলাগুলি। অল্পের জন্য সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচেছিলেন। তবুও দমে যাননি। এখন বোমা, গুলি আর বারুদের গন্ধে মোটেও ভয় পান না।
মুখে হাসি রেখে বলছিলেন, ‘মাঠে বা অফিসে যেতে কখনো কখনো সমস্যা হয়। মনে হয় এই বুঝি কোথাও বোমা ফাটল। কিন্তু এই ভেবে সান্ত্বনা দিই যে সিরিয়ায় তো এর চেয়েও খারাপ অবস্থায় রয়েছে মানুষ।’
আহরার জানালেন, যুদ্ধের জন্য নিয়মিত ফুটবল লিগ হচ্ছে না ফিলিস্তিনে। জাতীয় দলের অনুশীলনেও বিঘ্ন ঘটছে। তবে আগামী সেপ্টেম্বরে ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরু হবে।
সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করলেও আহরারের স্বপ্ন শিক্ষকতা করার, ‘পড়াশোনা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চাই।’ তবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রিয় পেশাটায় দিনের পর দিন যেভাবে কাজ করে চলেছেন তাতেও ভীষণ রোমাঞ্চিত আহরার।
Source:Prothom Alo
0 comments:
Post a Comment