রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মূল্যতালিকা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, সেটি এমন এক জায়গায় ঝোলানো, যেখানে দোকানপাট কম। মানুষের আনাগোনাও কম জায়গাটায়। কাপ্তানবাজার, কারওয়ান বাজারেও একই অবস্থা।
এই তিন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে জানা গেল, এখানের মূল্যতালিকাগুলো নিয়মিত হালনাগাদ হয় না। তাই মানুষের আগ্রহও নেই এসব নিয়ে। আর এ জন্য চোখের আড়ালে পড়ে থাকে।
সিটি করপোরেশনের এসব বাজারে মূল্যতালিকা হালনাগাদ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত বাজারে যানই না বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই অনেক সময় এ দায়িত্ব পালন করেন। তবে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
কাঁঠালবাগান জলিল স্টোরের সবজি বিক্রেতা মো. হানিফ বললেন, তাঁরা কেউ সিটি করপোরেশনে মূল্যতালিকা দেখেন না। তিনি অভিযোগ করেন, মূল্যতালিকা বাজারের সঙ্গে মিল রেখে করা হয় না। হানিফ বলেন, ‘ওই তালিকা দেখলে আমাদের দোকান থুইয়্যা পালানো লাগব। ব্যবসা করতে পারমু না। এইটা বাজারের সঙ্গে মিল রাইখ্যা করে না।’
একই দোকানের পাশে একজন বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই তালিকা মাঝেমধ্যে হালনাগাদ হয়, তবে সেটি এই বাজারেরই এক দোকানদার করেন। এর জন্য সিটি করপোরেশনের লোক আসে না।
কাপ্তান বাজার থেকে তরি তরকারি কিনছিলেন লক্ষ্মী বাজারের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। মূল্যতালিকা দেখে বাজার করেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে বাজার করছি, মূল্যতালিকা চোখে পড়েনি।
তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাজারের এক পাশে রয়েছে মূল্যতালিকা। সেটি তাঁরা দেখেন না। কাপ্তান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সবুজ বলেন, ‘শুনছি সিটি করপোরেশন তালিকা দিছে, কিন্তু দেহা হয় নাই।’ তাঁর দাবি ন্যায্যমূল্যেই তিনি সবজি বিক্রি করেন।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেল, রাজধানীর বড় এই বাজারের অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাই জানেন না কোথায় আছে মূল্যতালিকা। কয়েকজন পুরোনো বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলার পর জানা গেল, মাংসের বাজারের প্রবেশপথে এক দিকে রয়েছে মূল্যতালিকা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে মূল্যতালিকা স্পষ্ট নয়। ওই তালিকার পাশের কয়েকটি দোকানে গিয়ে জানা গেল, এই তালিকা ঠিকমতো হালনাগাদ হয় না। আর এটি ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউই দেখতে আসেন না। এখানে মাংস কিনছিলেন তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। মূল্যতালিকা দেখেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকা কোথায় এটাই তো জানি না। দেখব কীভাবে?’
মো. আক্তার নামের এক সবজি বিক্রেতার কাছে মূল্যতালিকা দেখে সবজি বিক্রি করেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকা আছে শুনেছি কিন্তু দেখার সময় পাই না। আর দশটা দোকানে যে দামে সবজি বিক্রি হয়, আমিও সেই দামে সবজি বিক্রি করি।’
হাতিরপুল বাজারের সামনে বেশ বড় করে মূল্যতালিকা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের ক্রেতা বা বিক্রেতাদের চোখে সহজেই এটি পড়ে। তবে তাঁরা এটি দেখেন না। সকালে গিয়ে দেখা গেছে, ওই মূল্যতালিকার সামনে শাকসবজির দোকান দেওয়া হয়েছে। মূল্যতালিকার কিছু কিছু পণ্যের দাম ওই শাকসবজির আড়ালে ঢাকা পড়েছে। জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা হাবিব বলেন, তালিকা আছে এটা তিনি জানেন, তবে তালিকা দেখার সময় হয় না। একই বাজারে সবজি কিনছিলেন হাতিরপুলের বাসিন্দা মো. হেলাল। তিনি বলেন, ‘তালিকা দেখে কী লাভ বলেন? তালিকা অনুসারে দাম রাখা হয় না। এটি দেখারও কেউ নেই।’
বাজারের মূল্যতালিকা না দেখা ও ঠিকমতো হালনাগাদ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন সরদার বলেন, মূল্যতালিকাটির পণ্যের দামের তালিকা তাঁরা প্রথমে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে পান। সে অনুসারে প্রতিটি বাজারে তাঁদের লোক তালিকা হালনাগাদ করে। তালিকা অনুসারে পণ্য বিক্রি না করায় আজও নারিন্দা বাজারে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিন। মূল্যতালিকা ঠিকমতো হালনাগাদ না করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি, অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, এই সিটি করপোরেশনে ৩৬টি বাজার আছে। রমজানে এসব বাজার তদারকি করার জন্য তাঁদের তিনটি কমিটিতে ২০ জন কর্মকর্তা আছেন। এ ছাড়া প্রতিটি আঞ্চলিক জোনের প্রধান নির্বাহীরা আলাদা করে কমিটি করে তদারকি পরিচালনা করছেন। বাজারের মূল্যতালিকা ঠিকমতো হালনাগাদ ও তদারকি করতে তাঁদের জনবল ঠিক আছে বলে মনে করেন তিনি। বাজার ঠিকমতো তদারকি হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ, তা অস্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশনে ৮৬টি মার্কেট আছে। কোনো কোনো বাজারের নিচে কাঁচাবাজারও আছে।’ ঠিক কতটি কাঁচাবাজার আছে, জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট করে তা বলতে পারেননি। এ বিষয়ে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ও খুদে বার্তার কোনো উত্তর দেননি।
Source:Prothom Alo
0 comments:
Post a Comment