নুপুর এখন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে, আর স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে অটোচালক নুরুলের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।
রাঙামাটি সদরের পশ্চিম মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা নুরুলের মতো পাহাড় ধসে ঘর হারা এবং ফের ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘর ছেড়ে আসা প্রায় আড়াই হাজার মানুষের দিন কাটছে জেলা সদরের ১৭টি আশ্রয় শিবিরে।
এরকম একটি কেন্দ্র রাঙামাটি সদরের ভেদভেদী এলাকার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন। প্রায় একশ পরিবারের তিনশ মানুষ এখানে ঠাঁই নিয়েছেন।
এদের মধ্যে কেউ কেউ স্বপরিবারে এলেও অনেকে পরিবারের নারী সদস্যদের রেখে এসেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।
ভেদভেদী নতুন পাড়া, পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ মুসলিম পাড়া, সনাতন পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি থেকে আসা আশ্রয়হারা মানুষ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানে কথা হয় নুরুলসহ অনেকের সঙ্গে।
ঘর টিকে থাকলেও সেখানে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই আশ্রয় কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা ভেদভেদী নতুন পাড়ার নাজমা খাতুনের (৭০)।
তিনি বলেন, ঘরের চারপাশে পাহাড়ের মাটি আর কাদা পানি। চলাচলের উপায় নেই। নাতি-নাতনিসহ আট জনের সংসার। দুই ছেলের বউকে বাড়ির কাছে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছেন।
“মঙ্গলবার থেকে এখানে আছি। আর কত দিন থাকতে হয় জানি না।”
নাজমার ঘর বাঁচলেও নতুন পাড়ার আরেক বাসিন্দা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমি আক্তারদের ঘর চাপা পড়েছে ধসে পড়া পাহাড়ের মাটির নিচে।
সুমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা-বাবা আর ভাইকে নিয়ে এখানে আছি। বৃষ্টি তো থামছে না। আবার যদি পাহাড় ধসে এই ভয়ে এখন কেউ ঘরও ঠিক করছে না।”
ভেদভেদী পশ্চিম মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা দিনমজুর মো. হানিফের ঘরও ধসের মাটিতে চাপা পড়েছে।
তিনি বলেন, “ঘর ঠিক করার মতো টাকা আমার কাছে নেই। বৌ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন এখানে আছি। এরপর কোথায় যাব জানি না।”
রাঙামাটিতে ৩৫ বছর বসবাসে এমন ধ্বংসযজ্ঞ দেখেননি জানিয়ে তিনি বলেন, “১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ও দেখেছি। তখন শুধু গাছপালা পড়েছিল। এরকম কখনো হয়নি।”
পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ায় ঘর ছেড়ে স্বপরিবারে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন সহর বানু আর পঞ্চমা আক্তারের মতো অনেকে।
ভেদভেদী দক্ষিণ মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা নুরুল আবছার মাহতাব ঘর হারিয়ে এখন আশ্রয় কেন্দ্রে।
আশ্রিত হলেও আশ্রয় কেন্দ্রে আসা বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে ছুটছিলেন মাহতাব।
এই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি বাঙালি। কেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমার তত্তাবধানে।
আশ্রিতদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা মো. হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুর ও রাতে ভাত দেওয়া হয়। আর রোজা যারা রাখছেন তাদের সেহরি দেওয়া হচ্ছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন।
এবারের পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটিতে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।
Source: BDNEWS24
0 comments:
Post a Comment