Daily bangla news by JasHim News 24 all bd news live 24 hours in this field thanks for watching.

Friday, June 16, 2017

সবাই মরে যাচ্ছি দোয়া করো কষ্ট যেন কম হয় By JasHim News

“চাচাতো বোনের ফোন পেয়ে তখন সবেমাত্র ওই টাওয়ার ভবনের নিচে গাড়ি নিয়ে পৌঁছেছি। কয়েক মিনিট পরই দেখি ১৮ তলার ফ্ল্যাটের জানালা খুলে চাচা চিত্কার করে বলছেন, ‘আমাদের বাঁচাও, আমাদের বাঁচাও।

আগুন আমাদের ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে পড়ছে!’ এর কিছুক্ষণ পরই আবার চাচাতো বোন তানিমার ফোন এলো, ওই শেষবারের মতো।
বলল, আগুন পুরো ফ্ল্যাট ছেয়ে ফেলেছে, বাথরুমটা শুধু এখনো বাকি। আমরা সবাই মরে যাচ্ছি, শুধু দোয়া করবেন যেন কষ্ট কম হয়!’ এটুকুর পর আর কোনো কথা বলতে পারিনি। তারপর যতবারই তানিমার নম্বরে ফোন দিয়েছি, বন্ধ পাওয়া গেছে। ”

যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনে ২৪ তলা গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে স্বজন হারানো আবদুর রহিম এভাবেই আগুনের ঘটনার সেই রাতের বর্ণনা দিচ্ছিলেন বিবিসি বাংলার কাছে। আবদুর রহিমের চাচা মৌলভীবাজারের কমরউদ্দিন কমরু মিয়াসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য ওই ভবনে বসবাস করে আসছিলেন। তাঁরা এখন নিখোঁজ, আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁরা বেঁচে নেই। তাঁদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের খৈসাউড়া গ্রামে।

গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ১টার দিকে গ্রেনফেল টাওয়ার নামের ওই ভবনটিতে আগুন লাগে। দ্রুতই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনজুড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ওই ভবন থেকে ৬৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে; এ সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মৌলভীবাজারের নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা হলেন কমরউদ্দিন কমরু মিয়া (৯০), তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৬৫), তাঁদের ছেলে আব্দুল হানিফ (২৮), আব্দুল হামিদ (২৬) ও মেয়ে হুসনা আক্তার তানিমা (২২)। তাঁরা ওই ভবনের ১৮ তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন।

কমরু মিয়ার ভাতিজা আবদুর রহিম বলেন, ‘আগামী ২৯ জুলাই তানিমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ও পড়াশোনা করত, পাশাপাশি একটা মোবাইল ফোন কম্পানিতে পার্টটাইম কাজও করত। বিয়ের জন্য হল বুকও করা হয়েছিল। পাত্র ছিল লেস্টারের—খুব ভালো ছেলে। আগুন লাগার খবর পেয়ে সেই ছেলেও এসেছিল লন্ডনে। বুধবার সারাদিন আমরা এই হাসপাতাল, ওই হাসপাতাল খুঁজে বেরিয়েছি। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। ছেলেটাও ভীষণ ভেঙে পড়েছে। ’

আমাদের মৌলভীবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ প্রবাসী আত্মীয়স্বজন জানিয়েছে, আগুন লাগার পর ওই রাত ৩টা পর্যন্ত ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আত্মীয়স্বজনের কথা হয়েছে। রাত ৩টার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, ভবনটিতে ফ্ল্যাট আছে ১৪৪টি। এতে ১৫০টি পরিবারের ৬০০ সদস্য বসবাস করে আসছিল। এর মধ্যে পাঁচটি বাঙালি পরিবার ছিল। এর একটি পরিবার মৌলভীবাজারের; তাদের বাড়িতে স্বজনদের মধ্যে চলছে আহাজারি। নিখোঁজ কমরউদ্দিন কমরু মিয়ার বড় ছেলে ও বিবাহিত দুই মেয়ে দেশে রয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার খৈসাউড়ায় কমরউদ্দিন কমরু মিয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে তাঁর বড় ছেলে সুজন মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাবার দুই বিয়ে। আমি প্রথম মায়ের সন্তান। আমাদের মা জীবিত আছেন। বাবা আমাদের লন্ডন নেননি। আমার বড় এক বোন ও ছোট এক বোন দেশে আছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ের পর আমার সৎ মাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যান। সৎ মায়ের ঘরে আমার তিন ভাই ও এক বোন। ’

সুজন বলেন, ‘বুধবার ফজরের নামাজের পর মোবাইল বেজে ওঠে। ফোন ধরলে অন্য প্রান্ত থেকে লন্ডনে থাকা আমার চাচাতো ভাই আবদুর রহিম জানায়, আমার বাবা, সৎ মা ও ভাই-বোনরা যে বিল্ডিংয়ে থাকেন, সেটাতে আগুন ধরে গেছে। তিনি বাড়িতে দোয়া-দুরুদ পড়ানোর জন্য বলেন। ’

সুজন আরো বলেন, ‘তারপর আমরাও লন্ডনে ফোন করেছি। সেখান থেকেও আত্মীয়স্বজন ফোন করছেন। সবাই বলছেন, আমার বাবা, সত্মা, দুই ভাই ও এক বোনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডনে থাকা আমার সত্ভাই আবদুল হাকিম বিয়ে করে অন্যত্র থাকত। সে ও তার পরিবার সুস্থ আছে। ’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমার বাবাসহ সত্মা ও ভাই-বোনরা বেঁচে আছে না মারা গেছে সেটা কেউই বলতে পারছে না। ’

এদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি বলেছেন, ‘দুঃখের সঙ্গে নিশ্চিত করছি, আগুনের ঘটনায় ১৭ জন মারা গেছেন বলে এ পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি। তবে দুঃখজনকভাবে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আমাদের আশঙ্কা। ’

লন্ডন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী কমিশনার স্টিভ অ্যাপ্টার বলেছেন, ‘পৌঁছানো কঠিন এমন কয়েকটি জায়গায় এখনো ছোট ছোট আগুনের পকেট রয়ে গেছে, তবে প্রায় পুরো ভবনটিতেই তল্লাশি সম্পন্ন হয়েছে। ’ তিনি জানান, ভবনটি পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং সেটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে নেই।
Source:kalerkantho
Share:

0 comments:

Post a Comment

Facebook

Search This Blog

News Archive

Blog Archive