Daily bangla news by JasHim News 24 all bd news live 24 hours in this field thanks for watching.

Sunday, July 16, 2017

মৌসুমি ১০ রোগে অস্থির দেশ by JasHim News 24

মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এবার বর্ষা মৌসুমে দেশে একযোগে ১০টি রোগ জেঁকে বসেছে। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ভয় সর্বব্যাপী। সেই সঙ্গে আছে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়া এমনকি জাপানিজ এনসেফালাইটিস আতঙ্ক। সঙ্গে আছে জিকা প্রবেশের ভয়। দেশে কম-বেশি প্রকোপ আছে কলেরা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টেরও। এসব রোগে কম-বেশি মৃত্যুর নজির আছে বিশ্বের কোথাও না কোথাও। মশাবাহিত রোগের জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, সেই সঙ্গে সরকারেরই স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের আগাম প্রস্তুতিতে গাফিলতিকে দায়ী করছেন। চিকুনগুনিয়ার বিস্তারে কীটনাশকের মান অকার্যকর হয়ে পড়েছে কি না কিংবা মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে কি না তা-ও সঠিকভাবে গবেষণার তাগিদ দিচ্ছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। পানিবাহিত রোগ হিসেবে ডায়রিয়া প্রতিরোধে ওয়াসার দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছে খোদ ঊর্ধ্বতন মহল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চিকুনগুনিয়ার বিস্তার হয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের কারণে। আমরা তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। যদিও চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে যে এডিশ মশা দায়ী, সেই মশা নিধনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। এটার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশন যদি ওই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে থাকে তবে স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর মশাবাহিত রোগের চাপ কমে যাবে। একইভাবে ডায়রিয়া যেহেতু পানিবাহিত জীবাণু থেকে হয়ে থাকে, তাই নিরাপদ পানির সংস্থান যদি ওয়াসা ঠিকমতো করে তবে ডায়রিয়ার নিয়ন্ত্রণও সহজ হয়ে যাবে স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরবারই বর্ষার সময় দেশে নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। এবার বর্ষা আগাম হওয়ায় চিকুনগুনিয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে এটি এখন নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। চিকিত্সাও চলছে ভালোভাবেই। এর মধ্যেই সব সরকারি হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় হেল্পডেস্ক খোলা হয়েছে। পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধির ব্যথা প্রশমনে প্রতিটি হাসপাতালে প্রয়োজনে জয়েন্ট পেইন ক্লিনিক বা আর্থালজিয়া ক্লিনিক খোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি বা ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হবে। দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালেও এই সেবা দেওয়া হবে। জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এবার একই সঙ্গে দেশে অন্যান্য রোগও দেখা দিয়েছে। ফলে সমস্যা বেশি মনে হচ্ছে। যা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। এর নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশেই দায়ী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, বর্ষায় যেসব রোগ দেখা যায় আমরা তার সব নিয়েই কাজ করছি। মাঠ পর্যায়েও আমাদের কর্মীরা সজাগ রয়েছে। ফলে ভালোভাবেই আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারব।

একই অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ বলেন, প্রধানত এডিস এজিপ্টি, কিউলেক্স ও অ্যানাফেলিস মশার মাধ্যমেই ছড়ায় এসব রোগ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ছয়টি রোগের ঝুঁকি থাকলেও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র অনুসারে, ওই তিন জাতের মশা অন্তত ৯টি রোগের মারাত্মক বাহক ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। যদিও বাংলাদেশে এই রোগের সব কটি নেই। তবে এই মশার উপদ্রব বৃদ্ধির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বড় ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে এবার দেশে চিকুনগুনিয়া বিস্তারে আগাম বর্ষা অনেকটাই দায়ী। এক কথায় এবার দেশে মশা প্রজননবান্ধব পরিবেশ-আবহাওয়া পেয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে। যার মধ্যে এডিস মশার প্রজনন বেপরোয়া হয়ে ওঠায় চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস সর্বত্র ছড়াতে সহায়ক হয়েছে।

এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য, বিশ্বে বছরে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে  ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ডেঙ্গুর ঝুঁকিতেই আছে ১০০টি দেশের প্রায় আড়াই বিলিয়ন মানুষ। বাংলাদেশও অন্যতম একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত।  

বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই মৌসুমে শুধু মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুই নয়, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড থেকেও জ্বর হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণও আছে আমাদের দেশে।

চিকুনগুনিয়া : দেশে গত মে মাসের শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তখন বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব না দিলেও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করে। এর মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে চিকুনগুনিয়া। ঢাকায় একরকম ঘরে ঘরে আক্রান্ত হয় মানুষ। ছুটতে শুরু করে হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে। তোলপাড় লেগে যায় সবদিকে। উচ্চ আদালতে গড়ায় এ রোগের প্রকোপের ঘটনা। জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আলোচিত হয়ে ওঠে চিকুনগুনিয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে হয় বারবার। সরকারের তরফ থেকে চালানো শুরু করা হয় জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন তত্পরতা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, চিকুনগুনিয়া পুরনো রোগ, আমাদের দেশে আগেও ছিল। এবার বিস্তৃতি বেশি হয়ে পড়ে। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। যদিও এর আগে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘মিডিয়ায় প্রচারের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই রোগ নিয়ে এক ধরনের প্যানিক তৈরি হয়েছে। জ্বর-শরীর ব্যথা হলেই এখন মানুষ সন্দেহ করছে চিকুনগুনিয়া!’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনের তথ্যে জানানো হয়েছে, গত ১২ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত আইইডিসিআরের ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা ৬৪৯ জন। এর বাইরের আক্রান্তদের তথ্য নেই আইইডিসিআরের কন্ট্রোলরুমে। তবে ১৩ জুলাই ঢাকাসহ চাঁদপুর, ভোলা, ঝিনাইদহ, যশোর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে মোট ১১৮ জন হটলাইনে ও ৫১ জন সরাসরি কন্ট্রোলরুমে এসে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চায় এবং পরামর্শ নেয় বলেও আইইডিসিআর সূত্র জানিয়েছে।

আইইডিসিআরের গবেষকরা জানান, ২০০৫ সালে ভারতে একদফা চিকুনগুনিয়ার ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিলে তখনো একবার বাংলাদেশে এ সমীক্ষা চালিয়ে কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রথম রোগী ধরা পড়ে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২০১১ সালে আবারও এর প্রকোপ দেখা দেয়। দোহারে ২৪৫ জনের রক্ত সংগ্রহ করে ৫২ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৩১ জনের দেহে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস পাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ১২ জনের দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ওই সময় তিনজন রোগীর দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা হয়।


ডেঙ্গু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে ১২ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫৬৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছে। যে হাসপাতালগুলো থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমে তথ্য জানানো হয়েছে শুধু সেই তথ্যই কন্ট্রোলরুমে সংরক্ষণ করা হয়। এর বাইরের কোনো খবর তাঁদের কাছে নেই বলে জানান ওই কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, যদি চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গু আগের বছরগুলোর মতোই একই ধারায় দেখা যায় তবে এটা বিপজ্জনক হবে।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুসারে, গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল দুই হাজার ৭৫৭ জন। মারা গেছে ছয়জন। সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তাই এবারও চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগের কমতি নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কমে গেলেও আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ কমছে না। ডেঙ্গুর উত্স বন্ধ হচ্ছে না বলেই এমনটা হচ্ছে।

ম্যালেরিয়া : মশাবাহিত আরেক ঘাতকব্যাধি ম্যালেরিয়া সারা বছর থাকলেও বর্ষা মৌসুমে প্রকোপ বেড়ে যায়। সরকারি তথ্যমতে, ২০১৬ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৭৩৭ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ১৭ জন। আর এখন দেশে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। ১৩ জেলায় এ রোগের বিস্তৃতি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম। তবে আক্রান্তদের প্রায় ৯৫ শতাংশই রয়েছে পার্বত্য চারটি জেলা ঘিরে। সে এলাকায় পর্যটক বা কর্মসূত্রে যাওয়া অন্যরাও এর ভয়ানক পরিণতির শিকার হয়।

ফাইলেরিয়ার ঝুঁকি : প্রায় সারা দেশেই ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী আছে। ফাইলেরিয়া বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, সাভার ফাইলেরিয়া হাসপাতালে প্রায় ৫৪ জেলা থেকে এই মৌসুমে ফাইলেরিয়ার ক্লিনিক্যাল রোগী আসছে। ওই বিশেষজ্ঞ তথ্য দিয়ে জানান, দেশে এখনো প্রায় ২০ লাখ মানুষ ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত। সরকার কয়েক বছর আগে এক জরিপের মাধ্যমে ১৯ জেলাকে ফাইলেরিয়ার মুক্ত বলে ঘোষণা দিলেও বাকি জেলাগুলোতে কোনো জরিপ হয়নি। ফলে ওই জেলাগুলো অরক্ষিত রয়ে গেছে। আবার ফাইলেরিয়ার চিকিত্সার সুযোগও এ দেশে খুবই সীমিত। ফলে আক্রান্ত রোগীরা বিকলাঙ্গ হওয়ার পথে। দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ বেশি থাকলেও রাজধানী ঢাকায়ও এ রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। ওই বিশেষজ্ঞ জানান, চারটি জাতের স্ত্রী মশা ফাইলেরিয়ার পরজীবী জীবাণু বহন করে থাকে। তবে বাংলাদেশে বেশি মাত্রায় এই পরজীবী (উচেরেরিয়া ব্যানক্রোফটি) বহন করে থাকে কিউলেক্স প্রজাতির স্ত্রী মশা। মানুষের ঘর-বসতির মধ্যেই এ ধরনের মশার বেশি বাস। তবে ঘরের আশপাশে নোংরা জলাশয়-নালা নর্দমায় এই মশা ডিম পাড়ে ও প্রজনন ঘটায়।

ডায়রিয়া : শীত, বর্ষা ও গরমে পালা করে দেশে প্রকোপ দেখা দেয় ডায়রিয়ার। এবার বর্ষা আগেভাগে চলে আসায় ডায়রিয়াও বিস্তার লাভ করেছে আগেভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমের তথ্য অনুসারে, গত ১১ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ২৮৬ জন আর মারা গেছে ছয়জন। আর গত এক মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ১২ জন। এর মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় গত ১০ দিনেই  ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাত হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা.সানিয়া তহমিনা বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে আগামী তিন-চার মাস পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর সঙ্গে ডায়রিয়া বিস্তারের ঝুঁকিও আছে। তাই আমরা এ ব্যাপারে সর্তকতামূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।

সোয়াইন ফ্লু : দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এইচ১এন১’ বা ‘সোয়াইন ফ্লু’র মতো ভাইরাসের আক্রমণও আছে। সরকারের হিসাবমতে, শুধু মে মাসেই দেশের ১২টি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১১৭ জন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগী। চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আগে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যু ঘটেছে কি না জানা না গেলেও এর আগে ২০০৯ সালের জুন থেকে গত বছর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই সোয়াইন ফ্লুতে কয়েকজনের মৃত্যু ঘটেছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

আইইডিসিআরের হসপিটাল বেইজ হিউম্যান ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স প্রতিবেদন খুঁজে দেখা যায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলে মে মাসে বিভিন্ন সংখ্যায় মোট ১১৭ জন সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিল। এর বাইরে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকা, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ ও নরসিংদীতে মোট ৯ জন ও এপ্রিল মাসে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বরিশাল ও দিনাজপুরে আরো ১০ জন সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত রোগী চিকিত্সা নিয়েছে। জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্ত করতে গিয়ে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেসব রোগী বিশেষ টিমের পর্যবেক্ষণে থাকলেও তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি নীতিগত কারণে। যদিও গত জুন মাসে আরো কোনো সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে কিনা তা জানা যায়নি। এ ছাড়া আইইডিসিআরের রিপোর্টও সম্পন্ন হয়নি।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা জানান, রুটিন হসপিটাল সার্ভিল্যান্সের আওতায় কয়েকটি জায়গায় সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তসহ আরো কয়েকটি ইনফ্লুয়েঞ্জার নমুনা মিলেছে। এ বিষয়ে সব হাসপাতালে সর্তকতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। এইচ১এন১ পিডিএম০০৯কে (সোয়াইন ফ্লু) এখন একটি মৌসুমি ভাইরাস বলে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশে এটি এপ্রিল থেকে সেপ্টম্বর পর্যন্ত প্রকোপ থাকলেও জুন-জুলাই মাসে সর্বাধিক প্রাদুর্ভাব ঘটে।

কালাজ্বর : চলতি বছরের মধ্যে দেশ থেকে কালাজ্বর নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও দেশের ২৬ জেলায় এখনো চলছে কালাজ্বর প্রকোপ। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে কালাজ্বরের ঝুঁকি। এবার বষা ামৌসুমে কালাজ্বরপ্রবণ এলাকায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কালজ্বরের প্রকোপ আবার বেড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম যত দীর্ঘ হবে ততই এ বিপদ বাড়বে বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তাঁদের মতে, মশার মতোই এক ধরনের বেলেমাছির মাধ্যমে কালাজ্বর ছড়ায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে ৪২টিরও বেশি জেলায় কালাজ্বরের প্রকোপ ছিল। ২০০০ সাল থেকে দেশে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ফলে এর সংখ্যাগত প্রকোপ দিনে দিনে কমতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০০০ সালে আক্রান্ত হয়েছিল সাত হাজার ৬৪০ জন এবং মারা যায় ২৪ জন। ২০০৬ সালে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৯ হাজার ৩৭৯ জন মানুষ কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল; এর মধ্যে মারা যায় ২৩ জন। দেশে এক বছরে কালাজ্বরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০০২ সালে; মারা যায় ৩৬ জন। আর ২০০৯ সালের পর থেকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।  

নিউমোনিয়া : শীতকাল শুধু নয়, বর্ষা মৌসুমেও এ দেশে নিউমোনিয়া লেগে থাকে। বিশেষ করে শিশুরা এর ঝূঁকিতে থাকে বেশি। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটছে না বরং এবার বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ায় নিউমোনিয়ার প্রকোপও বেড়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, এবারও এমন রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বের মধ্যে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এখানে গড়ে বছরে প্রায় ৬০ লাখ লোক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়; এর মধ্যে ৫০ হাজারের মতো শিশুর মৃত্যু ঘটে, যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। প্রতিবছর বিশ্বে ২০ লাখ শিশুর মৃত হয় নিউমোনিয়ার কারণে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই সংখ্যা চার লাখের বেশি।

শ্বাসকষ্ট : দেশে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। শীতের পাশাপাশি বর্ষাকালেও এ দেশে শ্বাসকষ্টের রোগীদের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে হাঁপানি বা অ্যাজমা।   জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী সাইফউদ্দীন বেননুর বলেন, এবার বর্ষায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা খুব প্রকট হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে-চেম্বারে রোগীদের ভিড় বেশি দেখা যায়। এর কারণ মনে হচ্ছে এবার আবহাওয়াটা খুব বেশি স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ তৈরি করছে। আর দীর্ঘমেয়াদি এমন পরিবেশ থাকায় নানা ধরনের জীবাণুর বিচরণ বেড়েছে। যা শ্বাসতন্ত্রে গিয়ে বাসা বাঁধছে।

চর্মরোগ : বর্ষা মৌসুমে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলেই মানুষের মধ্যে দেখা দেয় নানা ধরনের চর্মরোগ। গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকায় এর প্রকোপ ভয়াবহ হয়।   বন্যাপ্রবণ এলাকাতে ডায়রিয়ার পরই অবস্থান থাকে চর্মরোগের। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে একদিকে আর্দ্রতার কারণে শরীর শুকাতে সময় নেয়, আবার নানাভাবে জলাবদ্ধতাও থাকে। সব মিলিয়ে বেশ কয়েক ধরনের চর্মরোগ বর্ষায় খুবই বেড়ে যায়।

Source:kalerkantho
Share:

0 comments:

Post a Comment

Facebook

Search This Blog

News Archive

Blog Archive