Daily bangla news by JasHim News 24 all bd news live 24 hours in this field thanks for watching.

Wednesday, July 19, 2017

সব ভাস্কর্যই ‘মূর্তি’, কিন্তু দেব-দেবীরটি ‘প্রতিমা’ By JasHim Bangla News 24

সৌদি আরবসহ প্রায় দেশেই ভাস্কর্য থাকার উদাহরণ দিয়ে অনেকেই টকশো এবং লেখনীতে গ্রিক দেবী থেমিসের প্রতিমাকে ভাস্কর্য বলে এটা স্থাপন করাকে যুক্তিযুক্ত বলতে চাচ্ছেন। অথচ ওইসব দেশের ভাস্কর্য কোনো দেব-দেবীর বা তাদের আদৌ কোনো পূজনীয় প্রতীক নয়- শুধুই সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। ভাস্কর্য, মূর্তি ও প্রতিমা ও শব্দগুলোর এই ব্যবহারিক পার্থক্য রয়েছে। ভাস্কর কর্তৃক নির্মিত মূর্তিকে ইংরেজিতে Sculpture বলা হয়, তার খোদাই করা প্রতিমূর্তি বা শিলারূপ হলো Statue; অঙ্কিত বা খোদাই করা বা অন্যভাবে নির্মিত প্রতিমূর্তিকে Icon এবং তার নির্মিত প্রতিমা, উপাস্য দেব-দেবী বা ব্যক্তি বা বস্তুকে Idol বলা হয়। বাংলায় ভাস্কর্য অর্থ ধাতু, পাথর প্রভৃতিকে মাধ্যম করে মূর্তি নির্মাণশিল্প। মূর্তি অর্থ আকার, অঙ্গ, প্রতিমা, স্বরূপ। প্রতিমা অর্থ দেবতার প্রতিমূর্তি, বিগ্রহ, ছবি, প্রতিচ্ছায়া।
তাই ভাস্করের নির্মিত সবই মূর্তি হলেও দেব-দেবীর ভাস্কর্যকে পূজারীরা প্রতিমা বলে থাকেন। পক্ষান্তরে, সেগুলোকেও আমরা সাধারণত মূর্তি বলি। ভারতে এই প্রতিমা বা প্রতিচ্ছবি প্রবর্তনের মূল উৎসগত এক ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে আল-বেরুনীর ‘কিতাবুলহিন্দ’ নামক বইয়ে। আমাদের দেশে যেসব ভাস্কর্য বা মূর্তি আছে, তাকে কেউ পূজা করেন না। যেহেতু এসবই ইতিহাসসম্পৃক্ত, সেহেতু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকাই শ্রেয়।
দেব-দেবীরা পৌরাণিক যুগের। কালের বিবর্তনে তারা অনেকে বিলুপ্ত হয়েছে, কারো বা দৈব শক্তিরও বিবর্তন ঘটেছে। প্রতিমারও আবার বিলুপ্তি এবং কিছু পরিবর্তনের প্রমাণ রয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে। উল্লেখ্য, লন্ডনের আলবার্ট মিউজিয়ামে রাখা দেবী কালীর প্রাচীন প্রতিমার সাথে বর্তমানের মিল নেই। তদ্রুপ অমিল সূর্য দেবীর, যদিও বর্তমানে এটা প্রায় বিলুপ্ত।
‘বেশ কিছু ঐশ্বরিক শক্তি’ধারী, থেমিস ন্যায়বিচারের দেবী এবং প্রধান দেবমন্দিরে রীতিনীতি রক্ষাসহ ধর্মীয় পর্বাদির তত্ত্বাবধায়ক বলে গ্রিকদের ছিল ধর্মীয় বিশ্বাস। তাই, তার ভাস্কর্য বা মূর্তি প্রকৃত অর্থে প্রতিমা। ভিন্নরূপে বা পরিচ্ছদে তাকে প্রদর্শন করা বিবেচ্য বিষয় নয়। বিষয়টি স্রেফ তার ঐশী শক্তির পৌরাণিক বিশ্বাস সম্পর্কিত। আধুনিক যুগের প্রধান বিচারালয়ের অঙ্গনে তার প্রতিমা স্থাপনের ফলে কি তার ঐশী শক্তির স্বীকৃতিস্বরূপ সে বিচারালয়ের প্রতীক বলে কি প্রতীয়মান হয় না?
সংখ্যালঘুদের কোথাও কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কেউ লক্ষ্মী দেবীর প্রতিমা স্থাপন করেননি। অন্য ধর্মীয়দের অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে ব্যবসারক্ষক বলে বিশ্বাস্য, গ্রিক দেবতা হের্মিসর বা তিন ভাগ্য দেবীর (The Fate) প্রতিমা ভবিষ্যতে যদি কেউ স্থাপন করতে চান, তবে তার সেই ইচ্ছার উৎস তখন কী বলে বিবেচ্য হবে?
জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা আর প্রগতিশীলতার দোহাই দেয়া এই প্রতিমা সমর্থনের কৌশলী ভিত্তি যদি হয় রাজনৈতিক কোনো লক্ষ্য হাসিলের, তবে তা হবে ইতিহাসের সাথে বিবাদের শামিল। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের আধুনিক দেশ মতাদর্শজনিত দলাদলির যেন এক অফুরন্ত ভাণ্ডার, যা অন্য কোথাও ১৬০ কোটি মানুষের মধ্যেও বিরল। এহেন বাস্তবতায় অনেকে এমন সব কথা বলেন, যা এই মাটি ও মানুষের ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তারা হয়তো জানেন না, ১৮৭৫ সালে বোম্বেতে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আর্য সমাজ, শুদ্ধি ও সংগঠন কেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ মহারাজের খুনের কারণ, ১৯৪৭ সালে রাজস্থানে হাজার হাজার মেও সম্প্রদায়ভুক্তকে হত্যা, পুনঃহিন্দু ধর্মে শুদ্ধির মাধ্যমে গ্রহণের ইতিহাস। তারা হয়তো জানেন না যে, বর্তমানে ভারতে গরু নিয়ে যে রাজনীতি চলছে, তা ১৮৮২ সালে এই দয়ানন্দ সরস্বতীরই প্রতিষ্ঠিত গো-রক্ষা আন্দোলনের ফসল। হয়তো বা না জেনেই মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং মূলত বৌদ্ধদের রথযাত্রাকে বাঙালি সংস্কৃতি বলেছেন অনেকে। এখন তারা গ্রিক দেবীকে করতে চান আমাদের দেশে ন্যায়বিচারের প্রতীক। এ সবই যেন আমাদের ‘মেও’ সম্প্রদায়ের মতো বানানোর কৌশলী প্রচেষ্টা। দুর্মতি যেন না হয় আমাদের কারো জাতীয় দুর্গতির কারণ। 
Source: Daily Nayadiganta
Share:

0 comments:

Post a Comment

Facebook

Search This Blog

News Archive

Blog Archive