বিশ্বের বিভিন্ন বৃহৎ
রাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশ আয়তনের দিক
থেকে বড়
না হলেও
জনসংখ্যার ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর
যেকোনো রাজধানীর
প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
অথচ গধহধমবসবহঃ
এবং পরিকল্পনার
দিক থেকে
ঢাকার অবস্থান
সন্তোষজনক নয় বিধায় যানজট রাজধানীর
নাগরিকদের দুর্ভোগের প্রধান কারণ।
সম্রাট আকবরের
সেনাপতি মানসিংহ
১৬০১ সালে
ঢাকায় আগমন
করেন।
তখন থেকেই
ঢাকার নাম
ইতিহাসে স্থান
পায়।
২০১৭ সাল
অবধি ঢাকা
অনেক দূর
এগিয়ে গেছে,
কিন্তু পরিকল্পিতভাবে
গড়ে ওঠেনি
বলেই জনগণের
এত দুর্ভোগ। যানজটই
ঢাকাবাসীর প্রধান সমস্যা। যার
প্রধান কারণ
এত মানুষকে
ঢাকা আর
বইতে পারছে
না, তাই
সময় এসেছে
এ পদভারকে
কমানোর জন্য
জরুরি ভিত্তিতে
রাজধানীকে বিকেন্দ্রীকরণের পদক্ষেপ নেয়ার।
জাতিসঙ্ঘের পরিচালিত এক
জরিপ অনুযায়ী,
পৃথিবীর সবচেয়ে
ঘনবসতিপূর্ণ শহর হলো ঢাকা।
বর্তমানে ঢাকায়
প্রতি বর্গকিলোমিটারে
৪৪ হাজার
৫০০ মানুষ
বসবাস করে। এশিয়ার
শহরগুলোই ঘনবসতির
দিক থেকে
এগিয়ে।
সারা বিশ্বের
প্রায় ৭৪১টি
শহরে জরিপ
চালিয়ে এই
পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়।
খবর দ্য
গার্ডিয়ানের। ২০১৭ সালে জাতিসঙ্ঘের
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঘনবসতির ক্ষেত্রে এশিয়ার
অন্যান্য শহরের
মধ্যে মুম্বাই
রয়েছে দ্বিতীয়
অবস্থানে।
আর ফিলিপাইনের
রাজধানী ম্যানিলা
রয়েছে চতুর্থ
অবস্থানে।
‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের
(ইআইইউ) দ্বিবার্ষিক
জরিপে দেখা
গেছে, ঢাকা
দক্ষিণ এশিয়ার
সবচেয়ে ব্যয়বহুল
শহর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের
এক প্রতিবেদনে
বলা হয়,
বিশ্বের ১৩৩টি
শহরে জীবনযাত্রার
ব্যয় নিয়ে
পরিচালিত ওই
জরিপে ঢাকার
অবস্থান ৬২তম।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে
বেশি ব্যয়বহুল
শহর হিসেবে
ঢাকার পরে
আছে শ্রীলঙ্কার
রাজধানী কলম্বো,
সারা বিশ্বে
১০৮তম অবস্থানে। তৃতীয়
অবস্থানে নেপালের
রাজধানী কাঠমান্ডু,
তালিকায় স্থান
১১৬তম।
১৬০ ধরনের
পণ্য ও
সেবার দামের
ভিত্তিতে এই
তালিকা করা
হয়।
এগুলোর মধ্যে
খাবার ও
পানীয়, পোশাক,
বাড়িভাড়া, গৃহস্থালি পণ্য, প্রসাধনসামগ্রী, পরিবহন ব্যয়, স্কুলখরচ, ইউটিলিটি
বিল, বিনোদন
ব্যয় ইত্যাদি
রয়েছে।
ভারতের রাজধানী
নয়াদিল্লি এবং মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই
এমনকি পাকিস্তানের
করাচির চেয়ে
অনেক বেশি
ব্যয়বহুল ঢাকা।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে
ব্যয়বহুল শহর
হিসেবে উঠে
এসেছে সিঙ্গাপুর
সিটির নাম। বিশ্বের
ব্যয়বহুল শহরগুলোর
ছয়টির মধ্যে
পাঁচটিই এশিয়ার। সিঙ্গাপুরের
পরে রয়েছে
হংকং (দ্বিতীয়),
টোকিও (চতুর্থ),
ওসাকা (পঞ্চম)
ও সিউল
(ষষ্ঠ)।
ব্যয়ের দিক
থেকে তৃতীয়
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহর ইউরোপীয় শহরগুলোর
মধ্যে সবচেয়ে
বেশি ব্যয়বহুল। উত্তর
আমেরিকার শহরগুলোর
মধ্যে নিউ
ইয়র্ক সবচেয়ে
বেশি ব্যয়ের
১০টি শহরের
মধ্যে আছে। জরিপের
তথ্য অনুযায়ী,
বিশ্বের সবচেয়ে
কম ব্যয়ের
শহর কাজাখস্তানের
রাজধানী আলমাতি।
যা হোক, গণপরিবহনে
নৈরাজ্য নতুন
কথা নয়। নৈরাজ্য
পরিবহন জগতের
বিশৃঙ্খলা, মনোপলি ব্যবসা, আইন ও
নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতিযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ
নয়, বরং
এটাকে মানুষ
হত্যার একচেটিয়া
লাইসেন্সধারী সেক্টর বললে বেশি বলা
হবে না। সরকার
আসে, সরকার
যায়, কিন্তু
গণপরিবহনের ‘দাপট’ আর কমে না। কারণ
তারা সব
সময়ই সরকারি
দল।
যখন যে
দল ক্ষমতায়
সে দলের
নেতাদের সামনে
রেখেই পরিবহন
মালিকেরা তাণ্ডব
চালান।
সময়ে সময়ে
এ দেশে
যারা এমপি
বা মন্ত্রী
হয়েছেন তাদের
মধ্যে অনেকেই
পরিবহন ব্যবসার
সাথে জড়িত। পুলিশ
ও আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর অনেক
কর্তাব্যক্তিও পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত,
স্বনামে বা
বেনামে।
পরিবহন সেক্টরকে
সরকার নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে
না, বরং
সরকারকেই তারা
নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবহন শ্রমিকদের
যে সংগঠনটি
মন্ত্রী শাজাহান
খানের নেতৃত্বে
পরিচালিত, সে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে
সরকারি ও
বিরোধীদলীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।
পরিবহন সেক্টর থেকে
প্রতিদিন যে
চাঁদা ওঠে,
তার একটি
অংশ টপ-টু-বটম
অর্থাৎ সার্জেন্ট
থেকে শুরু
করে মন্ত্রণালয়ের
শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারা হয়।
প্রতি টার্মিনাল,
এক জেলা
থেকে আরেক
জেলায় প্রবেশ
করার সময়
চাঁদাবাজি ছাড়াও গণপরিবহনের নেতারা নিয়মিত
চাঁদা পেয়ে
থাকেন।
যেসব প্রাইভেট
মাইক্রোবাস যাত্রীদের জন্য ভাড়ায় খাটে
তাদেরও একটি
নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা পুলিশ ও
নেতাদের ‘পরিশোধ’
করতে হয়। বিআরটিএ
রুট পারমিট
দিলেও পরিবহন
নেতাদের মোটা
অঙ্কের টাকা
না দিলে
সে রুটে
বাস চালানো
যায় না। এটা
ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের
মতো যেন
একটি অলিখিত
আইন, যা
বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেপরোয়া ট্রাক সরকার
নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। কারণ
সরকার যতই
নিষেধাজ্ঞা দিক না কেন ঘুষবাণিজ্যের
কারণে তা
বিফলে যায়। ঘুষের
বিনিময়ে পুলিশের
পক্ষ থেকে
ট্রাকচালকদের টোকেন দেয়া হয়।
যেমনÑ এপ্রিল
মাসে যদি
বাঘের ছবির
টোকেন দেয়া
হয় তবে
মে মাসের
জন্য দেয়া
হয় হরিণের
ছবি ওয়ালা
টোকেন।
ওই টোকেনের
প্রতি মাসেই
পরিবর্তন হয়
যা পুলিশের
নির্ধারিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ট্রাকমালিকেরা
‘ক্রয়’ করেন। ফলে
ফিটনেস, ব্লুবুক
প্রভৃতি সঠিক
না থাকলেও
ট্রাক এক
জেলা থেকে
অন্য জেলায়
সহজেই চলাচল
করতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের
জরিপে দেখা
যায়, দেশে
প্রতি বছর
১২ হাজার
মানুষ সড়ক
দুর্ঘটনায় মারা যায়, আহত হয়
৩৫ হাজার
মানুষ।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন মোতাবেক, বাংলাদেশের বার্ষিক
আরবান গ্রোথ
হচ্ছে ৪
শতাংশ, আর
মোটর ভেহিক্যাল
গ্রোথ হচ্ছে
৮ শতাংশ। যাত্রীকল্যাণ
সমিতির হিসাব
মতে, ২০১৬
সালে ছয়
হাজার ৫৮১টি
সড়ক দুর্ঘটনায়
মৃত্যু হয়েছে
আট হাজার
৬৪২ জন।
যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার
কোনো সুনির্দিষ্ট
বিধান নেই। দুর্ঘটনায়
নিহত হলে
বিআরটিসি থেকে
মাত্র ২০
হাজার টাকা
ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান করা হয়েছিল,
যা সম্পূর্ণ
অপ্রতুল।
যানজট সমস্যা,
কিছুটা System Loss এবং কিছুটা
কৃত্রিম যা
দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে সংঘটিত
হচ্ছে।
আমাদের দেশে দুর্ঘটনা
কী কী
কারণে হয়
তা চিহ্নিত
করা দরকার। বিআরটিসির
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের বাস্তব অভিজ্ঞতা
এবং বিভিন্ন
গবেষণামূলক সংগঠনের সাথে মতবিনিময়ে যে
কারণগুলো উপলব্ধি
করেছি তা
তুলে ধরা
হলো।
০১. চালকদের পর্যাপ্ত
ট্রেনিংয়ের অভাব। ০২. চালকদের
শারীরিক ফিটনেসের
অভাব।
০৩. একই
চালকের একাধারে
মাত্রাতিরিক্ত সময় গাড়ি চালানো।
০৪. ক্রটিপূর্ণ
যানবাহন চালানো। ০৫.
গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে
মালিকদের উদাসীনতা। ০৬.
রোড ম্যানেজমেন্টে
কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতা। ০৭. রাস্তায়
চলাচলে যাত্রীদের
অসচেতনতা।
০৮. দুর্ঘটনাকবলিত
যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা অপ্রতুল।
চালকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের
অভাব : আমাদের
দেশের বেশির
ভাগ পেশাদার
চালক অসচ্ছল
পরিবার থেকে
আসেন।
তারা ‘ওস্তাদ’
ধরে গাড়ি
চালানোর সহযোগিতা
করতে করতে
‘ওস্তাদ’ অর্থাৎ
ড্রাইভারে পরিণত হন। সাঙ্কেতিক
চিহ্ন, দায়িত্বজ্ঞান,
অটোমোবাইলের প্রাথমিক জ্ঞান, স্পিড লিমিট
প্রভৃতি সম্পর্কে
জ্ঞান তাদের
থাকে না
বা এ
সম্পর্কে শিক্ষা
গ্রহণের ধার
ধারেন না। বিআরটিসির
ট্রেনিং স্কুল
ছাড়া দেশে
এজাতীয় কোনো
বৈধ প্রশিক্ষণকেন্দ্র
নেই।
২০০২-২০০৬
সাল পর্যন্ত
বিআরটিসি দেশব্যাপী
ড্রাইভিং ট্রেনিং
স্কুলের সংখ্যা
বৃদ্ধি করে
১৮টিতে উন্নীত
করেছিল, যার
বেশির ভাগই
এখন বন্ধ। বিআরটিএ
একটি দুর্নীতিগ্রস্ত
দফতর বিধায়
এখান থেকে
ভুয়া লাইসেন্স
গ্রহণ করা
কঠিন নয়। একটি
জাহাজের নাবিক,
বিমানের ক্যাপ্টেন
এবং এক
বাসড্রাইভারের মাঝে তফাত হলোÑ বিমান
আকাশে ওড়ে,
জাহাজ পানিতে
চলে, বাস
মাটির ওপরে
রাস্তা দিয়ে
চলাচল করে। কিন্তু
যাত্রীর জীবনের
নিরাপত্তার প্রশ্নে কারো চেয়ে কারো
দায়িত্ব কম
নয়।
যাত্রী ও
পথচারীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ড্রাইভারদের দায়িত্ববোধ
জাগিয়ে তোলার
প্রয়াস ও
ট্রেনিং নেয়ার
ব্যবস্থা অপ্রতুল। ইংল্যান্ড,
আমেরিকা, সিঙ্গাপুর
এমনকি থাইল্যান্ডেও
দেখেছি, সে
দেশের ড্রাইভারেরা
ড্রাইভিং অবস্থায়
মোবাইলে কথা
বলেন না। ২০১৩
সালের ডিসেম্বরে
ক্যামব্রিজ শহর থেকে ইস্ট লন্ডনে
একজন বাংলাদেশী
প্রবাসী নেতা
নিজেই গাড়ি
চালিয়ে স্ত্রীসহ
আমাকে লিফট
দেয়ার সময়
মোবাইলে কথা
বলার কারণে
তাকে ক্যামেরায়
শনাক্ত করে
জরিমানা করা
হয়।
সে ধরনের
প্রযুক্তি আমাদের দেশে গড়ে না
ওঠায় ড্রাইভিং
অবস্থায় মোবাইলে
কথা বলা
জনগণ বা
ড্রাইভার অপরাধ
মনে করে
না।
হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে আমাদের দেশে
শব্দদূষণ হওয়ায়
মানুষ ‘বধির’
বা আংশিক
বধিরতার রোগে
আক্রান্ত হচ্ছে। তা
ড্রাইভার ও
গাড়ির মালিক
উপলব্ধি করেন
না।
হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ
থাকলে এর
অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি।
চালকদের শারীরিক ফিটনেসের
অভাব : পেশাদার
চালক, যাদের
ওপর যাত্রীদের
জানমালের নিরাপত্তা
নির্ভর করে
তাদের শারীরিক
ফিটনেস জরুরি। অনেক
মানুষ রয়েছে,
যারা কোনো
কোনো রঙ
চোখে দেখে
না।
মর্মান্তিক হলেও সত্যি যে, পেশাদার
চালকেরা তীব্র
যানজট ও
রোদবৃষ্টির মধ্যে দূরপাল্লার গাড়ি চালিয়ে
একজন সাধারণ
জীবিকার মানুষের
চেয়ে কাজে
বেশি অক্ষম
হয়ে পড়েন। তার
পরও জীবিকার
তাগিদে গাড়ি
ড্রাইভ করতে
হয়।
প্রতি ছয়
মাস অন্তর
চালকদের মেডিক্যাল
টেস্ট করা
দরকার।
কিন্তু মালিক
বা সরকার
পক্ষ থেকে
এ ব্যবস্থা
নেই।
পেশাদার ড্রাইভিং
করার জন্য
একটি বয়স
নির্ধারণ করে
আইন করা
দরকার।
ভারী কাজ
করার জন্য
বয়স খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক
শ্রম আইন
মোতাবেক, আট
ঘণ্টার বেশি
ভারী শ্রম
করার বিধান
না থাকলেও
আমাদের দেশের
দূরপাল্লার ড্রাইভারেরা ঘণ্টা হিসেবে নয়,
বরং দৈনিকভিত্তিক
চুক্তিতে কাজ
করেন।
মালিকদের কাছে
চাকরির নিরাপত্তা
নেই বিধায়
মালিকদের ইচ্ছার
বাইরে কিছু
করার সুযোগ
থাকে না।
একই চালকের একাধারে
মাত্রাতিরিক্ত সময় চালানো : দূরপাল্লার গাড়িগুলোর
১ শতাংশ
বিআরটিসি নিয়ন্ত্রণ
করে।
ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে ৯৯
শতাংশ, যা
নিয়ন্ত্রণ করে বেসরকারি মালিকপক্ষ।
ব্যক্তিমালিকানার গাড়ির ড্রাইভারদের
চাকরির কোনো
নিরাপত্তা নেই এবং সরকার থেকে
চধু ঝপধষব
নির্ধারণ করে
দেয়া হয়নি। একজন
ড্রাইভার দিনে
বা রাতে
কত ঘণ্টা
ড্রাইভ করবেন
বা কতটুকু
দূরত্ব (LONG ROUTE) পর্যন্ত ড্রাইভ
করবেন তাও
সরকার নির্ধারণ
করেনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম
বা ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ যে
ড্রাইভার আপ
অ্যান্ড ডাউন
করেন, তার
পক্ষে পর্যাপ্ত
বিশ্রাম ছাড়া
একটি গাড়ি
চালানো মোটেও
নিরাপদ নয়। কারণ
শরীরের ওপর
কারো হাত
থাকে না। ড্রাইভিং
শুধু শারীরিক
পরিশ্রমের বিষয় নয়, এটা মানসিক
ও বুদ্ধিমত্তার
বিষয়ও।
সে হিসেবে
শরীরের জোরে,
বিনা বিশ্রামে
মাত্রাতিরিক্ত ড্রাইভিং বাস্তবে ঝুঁকিপূর্ণ।
চালক নিজের
শরীরের ওপর
যখন নিয়ন্ত্রণ
হারিয়ে ফেলেন
তখন দুর্ঘটনা
ঘটে।
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চালানো
: গাড়ির মালিকেরা
সঠিকভাবে গাড়ি
গধরহঃধরহ করেন
না।
বিআরটিএ থেকে
ঘুষের বিনিময়ে
Maintain সার্টিফিকেট নিয়ে গাড়ি
রাস্তায় চালানো
হয়।
তা ছাড়া
অর্থের বিনিময়ে
ফিটনেস সার্টিফিকেট
জোগাড় করা
কঠিন নয়। ত্রুটিপূর্ণ
গাড়ি নিয়ন্ত্রণ
হারিয়ে গেলে
দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা
: একটি বাস
কেনার পর
মালিক মনে
করেন, বাসটি
একটি Money Earning Machine হিসেবে ব্যবহৃত
হবে এবং
সে চিন্তাধারা
থেকেই Maintainance করার জন্য
অর্থ খরচ
করতে চান
না যতক্ষণ
পর্যন্ত গাড়িটি
বিকল হয়ে
না যায়। বিআরটিসির
চেয়ারম্যান হিসেবে উন্নতমানের Bus
Service যেসব রাষ্ট্রে রয়েছে যেমন- সিঙ্গাপুর,
ব্রিটেন, কলম্বিয়া
প্রভৃতি রাষ্ট্রের
রাষ্ট্রীয় Bus Service Corporation এবং Depotগুলো
সরেজমিন পরিদর্শন
(INSPECTION) করার সৌভাগ্য আমার
হয়েছে।
সেখানে দেখেছি,
তাদের Bus Service থেকে উপার্জনের
একটি অংশ
বাধ্যতামূলকভাবে Bus নিয়মিত Maintance-এর জন্য রেখে দেয়া
হয়, যা
শুধু Maintance কাজেই খরচ হয়ে থাকে। বিআরটিসির
গাড়ি Maintance করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা
ব্যাপক দুর্নীতি
এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন
মালিকেরা ব্যাংক
লোন পরিশোধসহ
অধিক মুনাফার
জন্য Maintance-এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ
করতে উৎসাহ
বোধ করেন
না।
চলন্ত অবস্থায়
গাড়ি নিয়ন্ত্রণ
হারিয়ে ফেলার
এটাও একটি
কারণ।
রোড ম্যানেজমেন্টে কর্তৃপক্ষের
অদূরদর্শিতা : বাংলাদেশে এক ডিপার্টমেন্টের সাথে
অন্য ডিপার্টমেন্টের
কাজের সমন্বয়
নেই।
যেমন সিটি
করপোরেশন রাস্তা
মেরামত করায়
পরের দিনই
ওয়াসা বা
টিঅ্যান্ডটি তাদের প্রয়োজনে রাস্তা কাটা
শুরু করে। গবেষণামূলক
তথ্যাদিতে দেখা যায়, বিভিন্ন জরিপের
মাধ্যমে মহাসড়কে
দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করা
হলেও সুপারিশ
মোতাবেক তা
এখনো সংশোধন
করা হয়নি। ঢাকা
মহানগরীতে Over Bridgeগুলো সম্পূর্ণরূপে
চালু হলে
যানজটের বিষয়টি
মাথায় রেখে
নির্মাণ করা
হয়েছে কি
না তা
বুঝা যাবে। Over Bridge, Fly overসহ বিকল্প
পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে জনসংখ্যা
ও প্রাইভেট
কারের আধিক্যোর
কারণে যানজট
সাধারণ পদক্ষেপের
মাধ্যমে সমাধান
করা সম্ভব
হবে না। কলম্বিয়ার
রাজধানী বোগোটা
শহরে ২০০৫
সালে গণপরিবহন
ম্যানেজমেন্টের ওপর উচ্চতর ট্রেনিং নেয়ার
সময় লক্ষ
করেছি, সপ্তাহের
যেকোনো একদিন
সেখানে গাড়ি
চলাচল বন্ধ
রেখে সাইকেল
চালানোর জন্য
রাস্তা খুলে
দেয়া হয়। ফলে
সপ্তাহে অন্তত
একটি দিন
ব্যস্ততম এলাকার
মানুষ যানজটমুক্ত
থাকে সম্পূর্ণ
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে।
এক সরকার পরিকল্পনা
করলে পরবর্তী
সরকার তা
বাস্তবায়ন করে না, বরং বাঁকা
চোখে দেখে। ঢাকা
শহরের যানজট
নিরসনের জন্য
অনেক পরিকল্পনা
হয়েছে, যার
পেছনে কোটি
কোটি টাকা
ব্যয় হয়েছে। কিন্তু
সরকার পরিবর্তনের
কারণে তা
আলোর মুখ
দেখেনি।
এক সরকারের
প্রতি অন্য
সরকারের বিদ্বেষমূলক
আচরণ পরিকল্পনা
বাস্তবায়নে অন্তরায়। এহেন মানসিকতার
পরিবর্তন হওয়া
বাঞ্ছনীয় রাষ্ট্রীয়
স্বার্থে।
যাত্রীদের অসচেতনতা : আমাদের
দেশের যাত্রীদের
অসচেতনতার কারণেও দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। যাত্রীরা
রাস্তা ব্যবহার
ও পারাপারে
সাঙ্কেতিক নিয়ম মেনে চলে না। তারা
ঝুঁকিপূর্ণ গাড়িতে চলার জন্য ব্যতিব্যস্ত
হয়ে পড়ে। ফলে
তাদের অসাবধানতা
ও দায়িত্বহীনতার
কারণেও দুর্ঘটনায়
পড়তে হয়।
যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা
অপ্রতুল : দুর্ঘটনায় পতিত মানুষ তাৎক্ষণিক
চিকিৎসার অভাবে
রক্তক্ষরণে বা অন্য কোনো কারণে
মৃত্যুবরণ করে। High Way
Police Petrol Team থাকলেও আমাদের দেশে
TROMA CENTRE বা HIGH WAY AMBULANCE TEAM
সরকার চালু
করেনি।
নিজস্ব অর্থায়নে
২০০৫ সালে
মাইক্রোবাস মোডিফাই করে বিআরটিসি ১৬টি
অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে একটি ঐওএঐ ডঅণ
অগইটখঅঘঈঊ ঝঊজঠওঈঊ চালু করে ছিল
বটে, কিন্তু
তার এখন
অস্তিত্ব নেই। সরকারি
উদ্যোগে বেসরকারি
পরিবহন মালিকদের
ঐওএঐ ডঅণ
অগইটখঅঘঈঊ ঝঊজঠওঈঊ চালু করার ব্যবস্থা
নিতে হবে। এ
অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যদি দেশব্যাপী দূরযাত্রার
রুটে চালু
করা যায়
তবে দুর্ঘটনায়
আঘাতপ্রাপ্তদের সহজেই কাছের হাসপাতালে নেয়া
সম্ভব।
চিকিৎসা গ্রহণে
দীর্ঘ সময়
নেয়ার কারণে
মৃত্যুর ঘটনা
অনেক বেশি।
সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের
দেশে মহামারী
আকার ধারণ
করেছে।
এর নিরসনে
বাস্তবমুখী পরিকল্পনার চেয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যই
বেশি দেয়া
হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনাকে
‘জাতীয় সমস্যা’
হিসেবে চিহ্নিত
করে এর
স্বল্প ও
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আগের
সরকার যে
পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল শুধু রাজনৈতিক
কারণে তা
পরিহার করা
বাঞ্ছনীয় নয়।হ
লেখক : গণপরিবহন পরিচালনায়
বিদেশে উচ্চতর
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সাবেক
চেয়ারম্যান, বিআরটিসি
0 comments:
Post a Comment