আইসিসির প্রস্তাবিত নতুন আর্থিক ও পরিচালনকাঠামোর কোনোটিতেই বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়নি। দুবাইয়ে আইসিসির বোর্ড সভা শেষে পরশু দেশে ফিরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান কাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন তাই হাসিমুখেই।
প্রস্তাবিত নতুন আর্থিক কাঠামো নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) আপত্তি ধোপে টেকেনি আইসিসির বোর্ড সভায়। ৯-১ ভোটে পাস হওয়া নতুন আর্থিক সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী ভারত আইসিসির কাছ থেকে পাবে ২৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের দাবি ছিল ৫৭০ মিলিয়ন ডলার। যে দাবি পূরণে আইসিসি সভায় অন্য বোর্ডের মতো বাংলাদেশকেও পাশে পায়নি বিসিসিআই।
বিসিবি নিজেদের সিদ্ধান্তকে সঠিকই মনে করছে। কাল বিকেলে গুলশানে নিজ বাসভবনে নাজমুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রথম সভাতেই আপত্তি তুলেছিলাম আর্থিক বিষয়ে, টাকা যেভাবে ভাগ করা হয় এটার ভিত্তিটা কী? তখন হিসাব না করেই চ্যালেঞ্জ করেছিলাম অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক কম টাকা পাচ্ছে। বাংলাদেশ এত কম পেতে পারে না। পরে নানা আলোচনার পর সবাই একমত, আরও বেশি টাকা প্রাপ্য বাংলাদেশের।’
২০১৪ সালে পাস হওয়া ‘তিন মোড়ল’ নীতি অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইসিসির আয়ের ২৭ দশমিক ৪ শতাংশই নেওয়ার কথা ছিল বিসিসিআইয়ের। এই ৮ বছরে আইসিসি থেকে ভারতের প্রাপ্য ছিল ৫৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোয় বিসিসিআই সেটি আর পাবে না। ভারতের কমলেও আয় বাড়ছে অন্য বোর্ডের। যে বাংলাদেশের আগে পাওয়ার কথা ছিল ৭৬ মিলিয়ন ডলার, এখন তারা পাবে ১৩২ মিলিয়ন। বছরে বিসিবির আগে পাওয়ার কথা ছিল সাড়ে ৯ মিলিয়ন ডলার, এখন সেটি হবে ১৬ মিলিয়ন। টাকার অঙ্কটা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়া আর সময়ের সঙ্গে ক্রিকেট-বাণিজ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করায় বিসিবি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়।
শুধু বাংলাদেশ কেন, আর্থিক সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতায় বিসিসিআই কাউকেই পাশে পায়নি। যদিও এ মাসের গোড়ায় বিসিসিআইয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বিসিবির। এবং বিসিবি সভাপতির বক্তব্যে বিসিসিআইয়ের পক্ষে থাকারই আভাস পাওয়া গিয়েছিল। উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট-সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না তো? নাজমুল তা মনে করেন না, ‘ভারতের উদ্বেগ শুধু আর্থিক বিষয়ে। তাদের অনেক বিষয়েই আমরা সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ টাকা বেশি পাবে—এটির বিরোধিতা তো করতে পারব না। এ সুযোগ কখনোই ছাড়ব না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিসিসিআইও এই কাঠামোর বিরুদ্ধে নয়।’
ভারতীয় বোর্ডের আপত্তিটা কোথায়? বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ওদের আপত্তি টাকা ভাগাভাগির প্রক্রিয়া নিয়ে। তারা চাচ্ছে, ওদেরটাও ঠিক থাক, অন্যরাও বেশি পাক। এখনো জুন পর্যন্ত সময় আছে (আইসিসির বার্ষিক সভা জুনে)। আর্থিক বিষয়টা গঠনতন্ত্রের অংশ নয় বলে এটা হয়তো জুন পর্যন্ত যাবে না। তবু এর মধ্যে ওরা যদি গ্রহণ করার মতো কোনো প্রস্তাব দিতে পারে, সেটা মানব। তবে আমাদের কারও এক পয়সা কমতে পারবে না।’
ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর আইসিসিকে চাপে ফেলতে এখনো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণা করেনি ভারত। বিসিবি সভাপতির আশা, শিগগিরই দল দিয়ে দেবে ভারত, ‘তারা ক্রিকেট-পাগল দেশ। জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তানের মতো ভারতের টাকার সংকট নেই। টাকার জন্য ওরা এটা করবে বিশ্বাস করি না। একটা পদক্ষেপ নিশ্চয়ই নেবে।’
Source: Prothom alo
0 comments:
Post a Comment